আনোয়ার হোসেন,কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)প্রতিনিধি >>> নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ মানুষের নির্মল আনন্দ-বিনোদনের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার আয়োজন চলছে। পাশাপাশি এ জনপদের গ্রামীণ মানুষের সমাজ-সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া খেলাধুলা নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতে গত কয়েকদিন আগে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ও মনোমুগ্ধকর লাঠি খেলা,পাতা খেলার আসর বসেছিল। এগুলো আনন্দ-বিনোদনের রেশ কাটতে না কাটতে আরেক নির্মল আনন্দের বর্ণিল উৎসব ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতার আসর বসে। প্রথম ও দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলা শেষে গত রবিবার(২২ জুন)বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের নয়ানখাল সরকারপাড়া গ্রামস্থ একটি মাঠে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ওই গ্রামের যুব সমাজ এ খেলাটির আয়োজন করে। এর আগে আয়োজক কমিটি খেলাটি উপভোগ করার জন্য উপজেলা শহরে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার চালায় এবং ছড়িয়ে দেয় সোশ্যাল মিডিয়ার নেট দুনিয়ায়ও। এতে হারিয়ে যাওয়া খেলাটি উপভোগ করতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করেন। এ ছাড়াও শিশু-কিশোর ও সব বয়সি নারীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই মাঠের বিশাল এলাকাজুড়ে দর্শক সারিতে ছিল হাজার হাজার মানুষ। এর ভিতরে ঝালরকাটা হরেক রঙে রঙিন কাগজে বেঁধে দেওয়া দড়ি/রশির বৃত্তের মধ্যে নওগাঁ,লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, তারাগঞ্জ ও স্থানীয়সহ বিভিন্ন প্রান্তর থেকে আসা অংশগ্রহণকারী ঘোড়ার সওয়ারি তাদের নানা চমকপ্রদ নামের হরেক রঙের টগবগে ছোট্ট-বড় ঘোড়ার পিঠে আহরণ করে পঙ্খিরাজের মতো বাতাসের সঙ্গে মিশে গিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেন। এ সময় বাদ্যের বাজনা,অশ্বারোহীদের বাতাসের সঙ্গে মিশে যাওয়া সাঁই সাঁই ও ঘোড়ার খুরের খটখট শব্দ,উৎসুক দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালি এক জীবন্ত উৎসবে রূপ নেয়। এ যেন চিরায়িত বাঙালির চিরচেনার ঐতিহ্যের এক ঐতিহাসিক মিলনমেলা। ২দিনব্যাপী এসব ঘোড়ার মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতার পর ৩টি গ্রুপের মধ্যে ৩টি ঘোড়া বিজয়ী হয়। এর মধ্যে নওগাঁর ১২বছরের কিশোরী পঙ্খিরাণী হালিমা অন্যসব টগবগে ও তেজি অশ্বারোহী প্রতিযোগিকে হারিয়ে ১ম স্থান অর্জন করে দর্শকদের মন কাড়ে। ছোট্ট কোমলমতি হালিমার এমন বিস্ময়কর ঘৌড়দৌড় খেলার ভেলকিবাজি দেখে তারা (দর্শকরা) হতবাক ও আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। দর্শকরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে তাকে (হালিমাকে) হাজার হাজার টাকা পুরস্কারের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত বীরাঙ্গনা না হলেও অশ্বারোহী বীরঙ্গনায় ভূষিত করেন। এ সময় হালিমার চোখে-মুখে ফুটে উঠে অবাক দৃষ্টির নির্মল হাসি। ২য় স্থান অধিকার করেন, লালমনিরহাট পাটগ্রামের আব্দুল জব্বার আলী। ৩য় স্থান অধিকার করেন স্থানীয় যুবক জোবায়েদ। তাদের একটি করে খাসি উপহার দেওয়া হয়। সৈয়দপুর, তারাগঞ্জ,নীলফামারী থেকে খেলা দেখতে আসা যুবক পায়েল হোসেন, সোহাগ হোসেন ও কাওছার মিয়া বলেন,ফেসবুকে এ খেলার কথা জানতে পেরে এখানে ছুটে এসেছি। এতোদিন বইয়ের পাতায় ও লোকমুখে ঘৌড়দৌড় খেলার কথা জেনেছি। আজ বাস্তবে এমন জমকালো ঘৌড়দৌড় খেলা দেখে আমরা ভিষণ মুগ্ধ হয়েছি। এ খেলায় আরো অভিভূত করে তুলেছে দুরন্তপনার চঞ্চল কিশোরী হালিমার ঘৌড়দৌড় খেলা। যাইহোক বাঙালি জাতিসত্তার ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি গ্রামীণ মানুষের নির্মল আনন্দের জন্য নিয়মিত এ ধরণের আয়োজন করার দাবি জানাচ্ছি। আয়োজক কমিটির পৃষ্ঠপোষক বাহাগিলী ইউনিয়ন শাখা বিএনপির সহ-সভাপতি ওবায়দুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মিলন সরকার বলেন, সমাজ থেকে নানা অনিয়ম দূর করাসহ গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া আভিজাত্যের প্রতীক ঘোড়দৌড় খেলা নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতে মূলত এই আয়োজন। যেখানেই এই ধরনের আয়োজন করা হয় সেখানেই জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। নির্মল এই বিনোদনে যোগ দেন অন্য জেলা-উপজেলা থেকে আসা দর্শকরাও। বহু দিন পর এই আয়োজন দর্শকদের মন কেড়েছে। খেলা দেখে উল্লাসে মেতে উঠেন তারা। তারা আরো বলেন, ঘোড়া অধ্যুষিত এ এলাকায় আগে প্রতি ঘরে ঘরে ঘোড়া লালন-পালন করত মানুষ। বাপ-দাদারা ঘোড়ার পিঠে আহরণসহ সময়-অসময়ে ঘৌড়দৌড় খেলার আয়োজন করতেন। যা নানাবিধ কারণে আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে। যা আজকের এই আয়োজনে ফুটে উঠেছে।
মন্তব্য